?affrid=alapanol

Saturday 29 August 2015

প্রশ্নপত্র হারানোয় বাতিল টেট,  সরকারি বয়ানে বাড়ছে সন্দেহ

আলাপন মহাকুল

 সরকারের চূড়ান্ত অব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ায় পিছিয়ে গেলো প্রাথমিকের টেট। আগামী রবিবার, ৩০শে আগস্ট হওয়ার কথা ছিল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট। ২৩ লক্ষের বেশি চাকরিপ্রার্থী এই পরীক্ষায় বসতে চলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার টেট-এর প্রশ্নপত্র হারিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষা পিছতে বাধ্য হলো সরকার। ৩০শে আগস্টের পরিবর্তে টেট হবে ৪ঠা অক্টোবর। প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ার দায় ডাক বিভাগের উপর চাপিয়ে রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করতে চলেছে। তবে প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়ার নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না চাকরিপ্রার্থীরা। এদিকে ৪ঠা অক্টোবর আদৌও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। ডি ওয়াই এফ আই-এর পক্ষ থেকে ৪ঠা অক্টোবর পরীক্ষার দিন পরিবর্তন করার এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।

যে বেসরকারি গাড়িতে প্রশ্নপত্র যাচ্ছিল, সেই গাড়িতে ডাকঘরের দু’জন কর্মচারী ছাড়াও ছিলেন দু’জন পুলিশকর্মী। প্রশ্নপত্র পাঠানোর দায়িত্ব যেহেতু ডাক বিভাগের ছিল, তাই খোয়া যাওয়ার দায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপর চাপিয়ে রাজ্য সরকারের গাফিলতি এড়িয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ডাকবিভাগ প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে এবং ডাক বিভাগের দু’জন কর্মচারীও সেই গাড়িতে ছিলেন। তাই মামলা করা হবে ডাক বিভাগের বিরুদ্ধে।’’ শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়েছে, ‘‘আমাদের দপ্তরের কেউ যদি জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ উল্লেখ্য, এই দু’জন কর্মীকে ইতিমধ্যেই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই দপ্তরের কর্মীরাই জানিয়েছেন, দু’জনেই তৃণমূল ইউনিয়নের নেতা। মামলা দায়ের করার বিষয়ে ডাক বিভাগের বক্তব্য, তারা আইনি চিঠি পায়নি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ৩০শে আগস্টের পরিবর্তে ৪ঠা অক্টোবর প্রাথমিক টেট হওয়া নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ৪ঠা অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে। ৩রা অক্টোবর রাজ্যের ৩টি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে। ৫ই অক্টোবর হবে নির্বাচনের ফল প্রকাশ। এই অবস্থায় কীভাবে ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর জন্য পরীক্ষার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা যানবাহন চলাচল কেমন থাকবে, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে। তাছাড়া প্রাথমিক টেট-এর কত প্রশ্নপত্র বেরিয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে তার হিসাব নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এক বস্তা প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।’’ অথচ বৃহস্পতিবার প্রশ্নপত্র খোয়া যাওয়া নিয়ে ডাক বিভাগ যে চিঠি দিয়েছে, তাতে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে, এক প্যাকেট প্রশ্নপত্র খোয়া গেছে। তাহলে মন্ত্রী কোথা থেকে এক বস্তা প্রশ্নপত্রের হিসাব পেলেন? তাহলে কী আরো বেশি প্রশ্নপত্র খোয়া গেছে? কোনো এক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যেই কি এই বিভ্রান্তিকর তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হলো? 

এমনিতেই গতবার প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে শাসকদল। এবারের নিয়োগ নিয়েও একইভাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের অপদার্থতা বারবার সামনে এসেছে। গত ২৮শে জুন আই টি আই-র প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। সেই প্রশ্নপত্র বাজারে দেদার বিক্রিও হয়। এই পরীক্ষা এক সপ্তাহ পিছতে হয়েছিল। ২০১২ সালের এস এস সি পরীক্ষার দিনে সময়মতো বহু কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছায়নি সরকারের চূড়ান্ত গাফিলতিতে। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের টেট ৩০শে আগস্টের পরিবর্তে ৪ঠা অক্টোবরে পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সেই অব্যবস্থার চিত্রই সামনে এসেছে। ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী টেট-এ বসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সময়মতো তাঁদের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে প্রশ্নপত্র পাঠানোর দায় পরীক্ষার পরিচালন সংস্থা সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের। কিন্তু পরীক্ষার দু’দিন আগে প্রশ্নপত্র হারিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা বাতিল হওয়ার পিছনে পর্ষদের পরিচালন ব্যবস্থায় গুরুতর গাফিলতিই বেআব্রু হলো।

২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা সামলানোর পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে ব্যবহার করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে, সেইসব কেন্দ্রের অধীন থানাগুলিতে প্রশ্নপত্র পাঠানো দায়িত্ব দেওয়া হয় ডাক বিভাগকে। গতবারও ডাক বিভাগকে এই দায়িত্ব দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার প্রাথমিকের টেট-এর প্রশ্নপত্র পাঠানো শুরু হয়েছিল। হুগলীতে পাঠানোর সময়ে প্রশ্নপত্র হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিস নিবেদিতা ভবন থেকে শ্রীরামপুর ডাকঘরের অন্তর্গত থানাগুলিতে নিয়ে যাওয়ার সময় দক্ষিণেশ্বর ব্রিজের উপর টোল প্লাজার কাছে একটি প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোয়া যায়। ডব্লিউ বি ১৫এ ৬২১৯ নম্বরের একটি বেসরকারি বাসে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেখানে। সেই বাসে ছিলেন শ্রীরামপুর ডাকঘরের কর্মী অরূপ দাস ও অরূপ মুখার্জি। দু’জনেই তৃণমূল ইউনিয়নের নেতা। তাঁদের দাবি, বাসের পেছনের ভাঙা কাচের জানলা দিয়ে প্রশ্নপত্র টোল প্লাজার সামনে দক্ষিণেশ্বর ব্রিজের উপর পড়ে যায়। তারপর ব্রিজে নেমে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোঁজা হয়। কিন্তু সেই খোয়া যাওয়া প্যাকেট উদ্ধার করা যায়নি। এই কথাই তাঁরা জানান ডাকঘরের পোস্টমাস্টারকে। এরপর ডাকঘরের সাউথ হুগলী ডিভিসন বিষয়টি লিখিতভাবে জানায় দক্ষিণবঙ্গের পোস্টমাস্টার জেনারেল এবং বেলঘরিয়া থানাকে। জানানো হয় শিক্ষাদপ্তর ও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়কেও।

No comments:

Post a Comment